নিজস্ব প্রতিবেদক: ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ২৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এবার পাল্টা মামলা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। মামলার বাদী ডি এম সাব্বির হোসেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের পাশ থেকে গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডি এম সাব্বির হোসেন গত বুধবার মামলাটি দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) এস এম শামীম।
এসি শামীম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুধবার রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ তাঁর সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ খান, এ পি এম সোহেল, ফারুক হাসান ও হাসান আলমসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ডাকসু ভবনে অনধিকার প্রবেশ করে ভিপি নুরসহ এজাহারভুক্ত আসামিরা গত ২২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় লাঠি ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ আটজন গুরুতর জখম হন। এ সময় তাঁদের মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন ও হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেন আসামিরা। হামলার সময় ১৫ থেকে ২০ জন লাঠি ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেন।
মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আলম রিশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী ডি এম সাব্বির। তাঁর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তিনি মামলা না করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।’
গত রবিবার দুপুরে ডাকসু ভবনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিজ কক্ষে ভিপি নুরুল হক নুর এবং তাঁর সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ ভিপি নুরের। তবে প্রথম দিন থেকেই ছাত্রলীগ এ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। এ ঘটনার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় আরো একটি মামলা করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিনের পশ্চিম পাশে আইবিএ ভবনসংলগ্ন দেয়ালের কাছে ককটেলটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে খবর দিলে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করে। কে বা কারা ককটেলটি রেখে গেছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন, আর মধুর ক্যান্টিনের বাইরে গোলঘরে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। সকাল পৌনে ১১টার দিকে কালো টেপ পেঁচানো ককটেলটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। দেখার পরই ককটেলটির ওপর পানি ঢেলে দেওয়া হয়। খবর দিলে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট এসে ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করে। সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রহিম এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ককটেলের ঘটনা অবশ্যই ছাত্রদল ঘটিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।’
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘এই ককটেলের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রদল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এই ঘটনা ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা থেকে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে ঘটানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে একটা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এ ঘটনাও আগের ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। ডাকসুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এই বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনবে বলে আমার বিশ্বাস। ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট এসে ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করে।’
ভিপি নুরকে নিরাপত্তা দিতে আইনি নোটিশ : ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের নিরাপত্তা দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন এ নোটিশ পাঠান।
স্বরাষ্ট্রসচিব, ঢাবির ভিসি ও প্রক্টর বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ডাকসু ভিপির ওপর হামলার ঘটনায় সবাই উদ্বিগ্ন। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সবার জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আইনগতভাবে বাধ্য। ভিপি নুর বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তাঁর ওপর আক্রমণ হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে ভিপি নুরের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন।
আহত সবাই শঙ্কামুক্ত : ডাকসু ভবনে হামলায় আহত প্রত্যেকে শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। গতকাল আহতদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসাধীন আটজনের মধ্যে কেউই বিপজ্জনক অবস্থায় আছে বলা যাবে না। গুরুতর আহত সোহেলকে আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। যখন মনে হয়েছে তার অপারেশন দরকার, তখনই অপারেশন করা হয়েছে। আঘাতের কারণে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউয়ে রাখা হবে। শনিবার তাকে আমরা কেবিনে দেব।’
আহত ফারাবীর বিষয়ে এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফারাবীর উল্লেখযোগ্য কোনো ফাইন্ডিং ছিল না। সে বলেছিল মাঝে মাঝে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তার রেস্টের দরকার ছিল। সে এখনো রেস্টের মধ্যে আছে। তাকে আমরা এইচডিইউয়ে রেখেছি। আমাদের মেডিক্যাল এক্সপার্টরা তাকে দেখছেন। শনিবার তাকেও ওয়ার্ডে দেওয়া হবে। আর নুরের সব কিছু মোটামুটি ভালো আছে। এখন নতুন করে একটা সমস্যার কথা বলছে। আমরা এক্স-রে করতে দিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর তাকে রিলিজ দেওয়া হবে।’
এ কে এম নাসির উদ্দিন আরো বলেন, ‘আমিনুলের কিডনিতে সমস্যা থাকায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেহেদী হাসানের প্রেসার একটু বেশি। তাকে রিলিজ দেওয়া হবে। নাজমুলের হাতে ব্যথা ছিল। এক্স-রে করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর আজ (গতকাল) তাকে আমরা রিলিজ দেব। আরিফের কানে আমরা সমস্যা পেয়েছি। তার প্রেসার বেশি হওয়ায় তাকে অবজারভেশনে রাখব। ফারুকের কানের সমস্যা ছিল। আমাদের এক্সপার্টরা দেখেছেন। তাকেও আমরা রিলিজ করে দিতে পারি।’